ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চকরিয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিস, সরকারি আদেশও মানে না

সংরক্ষিত বনভূমির বসতবাড়ি ও দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ায় বন্যপ্রাণী ঝুঁকির মুখে পড়ছে। ফলে বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসছে। বিদ্যুতের ফাঁদে আটকা পড়ে হাতিসহ অনেক মুল্যবান বিভিন্প্রন প্রজাতির বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বড় অঙ্কের মাসোহারার বিনিময়ে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ৫টি বনবিটের আওতাধীন সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনের বনভূমিতে বসবাসরত ১ হাজার ৯৮৩টি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চকরিয়া জোনাল অফিস। এখনও নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি বন সংশ্লিষ্টদের।

ফাঁসিয়াখালী বন রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন বনভূমিসহ সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও পল্লী বিদ্যুতের ২ হাজার ১২২টি বিদ্যুৎ খুঁটি রয়েছে। এসব খুঁটি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে অবৈধভাবে নির্মিত বসতবাড়ি, দোকান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার গ্যারেজে। অথচ ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ অফিসের সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চকরিয়া কার্যালয় ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চকরিয়া বিভাগীয় প্রকৌশলীর দপ্তরে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে চিঠি দিয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বিদ্যুৎ বিভাগ সরকারি নির্দেশ না মেনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে।’

সূত্র দাবি করেছে, কারও বসতবাড়ি বা স্থাপনায় বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করলে তাতে ভিটাবাড়ির খতিয়ান বা দলিলের ছায়াকপি সংযুক্ত করতে হয়। অথচ সরকারি সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনভূমিতে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিহীন সনদ দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনভূমিতে বসবাসকারী একাধিক বাসিন্দা দাবি করেছেন, তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন।
বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেরাজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘সংরক্ষিত বনভূমিতে অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইচ্ছে করলে বনবিভাগ অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে যে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। তবে বনবিভাগ অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য এই আইন প্রয়োগ না করায় এখন অবৈধ দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে প্রতিনিযত। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আইন প্রয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে।’
সংরক্ষিত বন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ থাকায় হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণী বিদ্যুতের ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। লামা বনবিভাগের ইয়াংছা ও কুমারী এলাকায় বিদ্যুতের ফাঁদে আটকা পড়ে সম্প্রতি একটি গর্ভবতী হাতি মারা গেছে। এ ছাড়া চুনতি অবয়ারণ্যেও হাতি মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংরক্ষিত বনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ায় বন্যপ্রাণীর বিচরণ ও প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার উত্তর-দক্ষিণ বনভূমিতে হরিণ বিলুপ্তপ্রায়। স্বল্পসংখ্যক হাতি থাকলেও খাদ্য সংকটের কারণে মানুষ ও হাতির মধ্যে প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। এ কারণে বনজীবী লোকজন প্রাণ হারাচ্ছে।
স্থানীয় আহমদ হোসেন বলেন, ‘সংরক্ষিত বনে অবৈধ বসবাস বন্ধে বনবিভাগকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা অতীতে টাকার বিনিময়ে মানুষকে সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে। এসব বন্ধ হওয়া দরকার বলে দাবী জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।’

 

পাঠকের মতামত: